top of page

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী নাকি মাটির তৈরীঃ

 

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্‌ সুব্‌হানাহূ ওয়া তাআ’লার জন্যে, যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন। দরুদ ও সালাম সর্বশেষ নবী, তাঁর পরিবারবর্গ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুমদের প্রতি।

 

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী নাকি মাটির তৈরী” বিষয়টি নিয়ে উম্মাহ্‌র কারও কারও মধ্যে বিভেদ রয়েছে। কোনো কোনো মুসলিম উল্লেখিত বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে মারামারি করতেও দ্বিধাবোধ করে না। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুম, যাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের প্রাণের চেয়ে এতটাই বেশি ভালবাসতেন যে, নিজেদের বক্ষ নিক্ষিপ্ত তীরের সামনে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেও পিছপা হতেন না। অথচ তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে এতটা উৎকন্ঠিত ছিলেন না। তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা বলতে বুঝতেন, তাঁর আনীত জীবন-ব্যবস্থাকে নিজেদের মধ্যে কার্যে পরিণত করা, নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে তা রক্ষা করা ও এর দা’ওয়াকে সারা বিশ্বের মাঝে পৌছে দেয়া।

 

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী” এরূপ জ্ঞান করা বিদআ’ত, কেননা সওয়াবের নিয়ত করে যে ইবাদত করা হয়; অথচ তার পক্ষে শরীয়তে কোন দলীল পাওয়া যায় না, তাকেই বিদআ’ত বলে। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি এমন আ’মল করবে, যার পক্ষে আমার কোন নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।” (বুখারী ও মুসলিম)

“ইসলামের মধ্যে প্রত্যেক নতুন কাজই বিদআ’ত। আর প্রত্যেক বিদআ’তই হচ্ছে ভ্রষ্টতা।” (আহমাদ)

 

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী” এরকম মনে করে তাঁর প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করা যাবে না। অর্থাৎ আল্লাহ্‌ সুবহানাহূ ওয়া তাআ’লা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে মর্যাদা প্রদান করেছেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানে এর চেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করতে পারব না। যদিও আল্লাহ্‌ সুবহানাহূ ওয়া তাআ’লার সৃষ্টির মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং সকলের উপর তিনি সর্বাধিক মর্যাদাবান। কিন্তু তাঁর প্রশংসায় অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ি করা আমাদের জন্য জায়েয নেই। যেমন খৃস্টানরা ঈসা বিন মারইয়াম-এর প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“তোমরা আমার প্রশংসায় বাড়াবাড়ি ক’রো না, যেমন খৃস্টানগণ ঈসা বিন মারইয়াম-এর প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করেছে। আমি তো শুধু তাঁর (আল্লাহ্‌র) বান্দাহ্‌। তোমরা বলবে আল্লাহ্‌র বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।” (বুখারী)

সর্বপ্রথম আল্লাহ্‌ সুব্‌হানাহূ ওয়া তাআ’লা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নূর সৃষ্টি করেছেন, এ কথাটিও সঠিক নয়। কেননা এ সম্পর্কে শরীয়তের সহীহ্‌ কোন দলীল নেই, জাল (বানোয়াট) হাদীসের ভিত্তিতে অনেকে কথাটি বলে থাকে। তাছাড়া আদম সন্তান যে উপাদানে সৃষ্টি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সেই উপাদানেই সৃষ্টি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ সুব্‌হানাহূ ওয়া তাআ’লা বলেন,

 

“বলুনঃ আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্‌ই একমাত্র ইলাহ্‌। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তাঁর পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাঁর পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।” (সূরা কাহাফঃ ১১০)

 

এছাড়াও কতিপয় অতি উৎসাহিত মুসলিম রয়েছে যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার নামে শির্ক করে ফেলে অর্থাৎ তাঁকে আল্লাহ্‌র অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে। তাদের উক্তি ─

‘দেহ ছাড়া ছায়া হয় না/ ছায়া কোনদিন জুদা হয় না/ যাহেরে নবী বাতেনে খোদা/ দুইজনে একজন।’

এখানে দেহ বলতে আল্লাহ্‌ আর ছায়া বলতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয় এবং প্রকাশ্যে যিনি নবী গোপনে তিনিই খোদা (আল্লাহ্‌), মূলতঃ দুইজনেই হচ্ছে একজন। নাঊযুবিল্লাহ্‌।

 

মহান আল্লাহ্‌ সুব্‌হানাহূ ওয়া তাআ’লা যেন আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করেন এবং যাবতীয় শির্ক ও বিদআ’ত মুক্ত রাখেন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রকৃত ভালবাসার তাওফীক্ব দান করেন।  আ-মীন।

 

 

 

মুহাম্মাদ কাউসার হুসাইন

ইমাম, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

ড্যাফোডিল টাওয়ার – ০৪

শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি, ঢাকা

 

imam1@daffodilvarsity.edu.bd

bottom of page